স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যৌতুক লোভী স্বামী ও তার পরিবারের নির্যাতনের শিকার হয়ে এক সন্তানহারা গৃহবধু বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। দফায় দফায় যৌতুক দিয়েও স্বামীর সংসার করতে পারছেন না পলি । এ ব্যাপারে সরাইল থানায় মামলা করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না নিযার্তিতা গৃহবধু।
জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসধিা গ্রামের জয়নাল মিয়ার মেয়ে পলি আক্তার । ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর একই জেলার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর সোলাবাড়ির মোঃ সামসু মিয়ার ছেলে মোঃ মিন্টু মিয়ার সাথে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার।
জানা যায়, বিয়ের পর থেকেই যৌতুক দাবিসহ বিভিন্ন অযুহাতে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের নানান নিযার্তনের শিকার হয়ে আসছিলেন তিনি। এরই মধ্যে একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয় তার গর্ভে। নাম রাখেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ফুটফুটে এই কন্যা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে শত নিযার্তন সয়েও স্বামীর সংশার করে যাচ্ছিলেন পলি। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস! চলতি বছরের ৭ আগস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস পানিতে পড়ে মারা যায়। মেয়েটির অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর পর তার উপর নিযার্তনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এমনিতেই সন্তান হারানোর শোক ; তার উপর স্বামী, শ্বশুর, সৎ শ্বাশুরী ও নানদিনীর নিযার্তনে অসুস্থ হয়ে পড়েন পলি। এমতাবস্থায় বিষয়টি সুরাহার জন্য গত ২৬ নভেম্বর পলির মা-বাবা জামাই‘র বাড়ি সরাইলের পানিশ্বর যান। এসময় স্বামী, শ্বশুর, সৎ শ্বাশুরী ও নানদিনীসহ পরিবারের লোকজন মিলে পলিকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এসময় মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে তার পিতা জয়নাল মিয়াও আহত হন। পরে মারাত্মক আহত অবস্থায় পলিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এ ঘটনায় গত ১ ডিসেম্বর পলি নিজে বাদী হয়ে তার স্বামী, শ্বশুর ও সৎ শ্বাশুরীসহ ৭ জনকে আসামী করে সরাইল থানায় নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পলির বিয়ের সময় তার স্বামী মিন্টু মিয়াকে নগদ এক লক্ষ টাকা ও সাড়ে তিন ভরি স্বণার্লংকারসহ প্রায় চার লক্ষ টাকার মালামাল প্রদান করা হয়। বিয়ের পর যৌতুকের দাবিতে তার উপর শুরু হয় স্বামী, শ্বশুর ও সৎ শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজনের অমানসিক নির্যাতন। মেয়ের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে পলির বাবা দফায় দফায় টাকা দেন। সৌদি আরবে ব্যবসা করা, বাড়িতে বিল্ডিং নিমার্নসহ বিভিন্ন অযুহাতে প্রায় দশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন মিন্টু ও তার যৌতুকলোভী পরিবার। এভাবে অতিবাহিত হয় সাত বছর। এরই মধ্যে পলির একমাত্র ৫ বছরের কন্যা সন্তানটি পানিতে পরে মারা গেলে তার উপর নিযার্তনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। সর্বশেষ মিন্টু মিয়া ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে ঋণমুক্ত হবার অযুহাতে আরো দুই লক্ষ টাকা দাবি করেন। কিন্তু পলির বাবা আর টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে মিন্টু ও তার পরিবারের লোকজন পলিকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এদিকে সরাইল থানায় মামলাটি রজ্জু হবার দুই সপ্তাহেও কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে তার স্বামী মামলার ১ নং আসামী মিন্টু মিয়া সৌদি আরবে চলে গেছেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সরাইল থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক গৌতম চন্দ্র দে বলেন, আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দফায় দফায় অভিযান চালানো হচ্ছে এবং আসামীদের অবস্থান নিশ্চিত হবার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে যারপরনাই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply